একই বাংলা সনের ১লা বৈশাখ তথা নববর্ষ উদযাপিত হয় আলাদা ভাবে দুইদিন! দ্রুত সংশোধনের প্রয়োজন
আগে অবিভক্ত বাংলায় নববর্ষে আলাদা দিনে পালিত হত না। এখন দুই দেশে কেন এক দিনে ১লা বৈশাখ ও শুভ নববর্ষ পালনের ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না? একই দিন দুই বার ১লা বৈশাখ তথা শুভ নববর্ষ, জন্ম, মৃত্যু ও বিশেষ দিন পালন করা হচ্ছে দুই দেশে। এটা হাস্যকর নয় কি?
বাংলাদেশ ও ভারত ভাগ হওয়ার পর বাংলা নববর্ষ কি করে দুটো আলাদা দিনে পালিত হচ্ছে এর জবাব জাতির কাছে কে দেবে? এর বিরুদ্ধে দুই দেশেই প্রতিবাদ হওয়া উচিত। দুই বাংলায় এখনই একই দিনে ১লা বৈশাখ ও শুভ নববর্ষ পালন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
আজ ১৪ ই এপ্রিল বাংলাদেশে আর আগামীকাল ১৫ ই এপ্রিল ভারতে। আদি পঞ্জিকা মতে নতুন বাংলা বর্ষ শুরু হবে আগামীকাল ১৫ ই এপ্রিল শনিবার। এই ১৫ ই এপ্রিল নববর্ষ উদযাপন যুগ যুগ ধরে বাংলার হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান সবাই মিলে একসাথে হাজার বছর ধরে মেনে এসেছে। এই তারিখটা পরির্বতন কেন করা হলো ? যেহেতু ভারতের বাঙ্গালীরা আদি পঞ্জিকা মেনে ১৫ তারিখ করে আসছে। হঠাৎ করে বাংলাদেশে সিদ্ধান্ত নিয়ে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে একটা ব্যবধান এনে দিলেন কেন? মজার ব্যাপার হচ্ছে দেশে এত সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে শুরু করে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা ও চেতনা যারা ধারণ করেন বলে দাবী করেন তারাও এ ব্যাপারে একেবারেই চুপ।
এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়কে সেই আদি পঞ্জিকা মেনেই ১৫ এপ্রিল তারিখেই বাংলা নববর্ষ পালন করতে হচ্ছে। কারন হিন্দু সম্প্রদায়ের সমস্ত পূজা পার্বন অনুষ্ঠিত হয় এই আদি পঞ্জিকা মতে। সেখানে লগ্ন ও তিথি নির্ধারন করা থাকে। যা দেখে পূজা, অর্চনা, শুভ সময় ও দিন নির্ধারিত করা হয়। কিন্তু ততকালীন বাংলাদেশ সরকার সমাধান না করে এভাবে ক্যালেন্ডার করলেন! এতে তিথি ও লগ্ন নির্ধারন করার কোন সুযোগ নেই। তবে এ কথা সত্য মুসলিম ফতুল্লাহ শিরাজীর সুপারিশে সম্রাট আকবর নতুন বর্ষপঞ্জি ‘তারিখ-ই-ইলাহী’ বা ‘ইলাহী সন’ চালু করেন।
বর্তমানে এই অবস্থাতে দুই বাংলায় মনিষীদের দুইদিনের এই তারিখ ভেদে দুইবার করে জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন উদযাপিত হয়, এটা দুঃখজনক! তারা কি দুইবার একই দিনে দুই খন্ড ভেদে মৃত্যুবরণ ?
বঙ্গাব্দ, বাংলা সন বা বাংলা বর্ষপঞ্জি হল বঙ্গদেশের একটি ঐতিহ্য মণ্ডিত সৌর পঞ্জিকা ভিত্তিক বর্ষপঞ্জি ও পঞ্জিকা সাল। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌরদিন গণনা শুরু হয়। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে মোট ৩৬৫ দিন কয়েক ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। এই সময়টাই এক সৌর বছর। গ্রেগরীয় সনের মতন বঙ্গাব্দেও মোট ১২ মাস। আকাশে রাশিমণ্ডলীতে সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে বঙ্গাব্দের মাসের হিসাব হয়ে থাকে। অনেকে এই সনটিকে ফসল তোলার সন বলে থাকেন।
বঙ্গাব্দ শুরু হয় পহেলা বৈশাখ বা বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে। জানাযায়, সংশোধিত বাংলা পঞ্জিকা বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৭ সালে গৃহীত হয়। এটা দ্রুত সংশোধনের প্রয়োজন আমি মনে করি।
উল্লেখ্য, ফতুল্লাহ শিরাজীর সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত ফার্সি বর্ষপঞ্জির অনুকরণে ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর নতুন বর্ষপঞ্জি ‘তারিখ-ই-ইলাহী’ বা ‘ইলাহী সন’ চালু করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহণের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়।
Leave a Reply