আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জাতিসংঘের শুভেচ্ছা
জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসসহ এদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কর্মীরা বিভিন্ন ভাষায় বাংলাদেশের জনগণকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ বাংলাদেশের অফিসিয়াল ফেসবুক এবং টুইটার একাউন্টে ভিডিও বার্তাটি শেয়ার করা হয়েছে। এই ভিডিও বার্তায় অংশ নেন জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। গোয়েন লুইস এবং জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থার প্রধান সুসান ভিজে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও এর ঐতিহ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে যৌথভাবে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। প্রবন্ধে তারা বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করি। বিশ্বের ভাষাগত, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে কেন্দ্র করেই আমরা দিনটি পালন করি। বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য ভাষা আন্দোলনে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়’।’
আরো বলা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। এই দিনে দেশের জনগণ সাহসিকতার সঙ্গে যে সংগ্রাম করেছিলেন, তাঁদের আমরা ভুলিনি, ভুলব না।’
এছাড়াও জাতিসংঘ সদরদপ্তরে সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) টানা ৬ষ্ঠ বারের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের এ আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবারেও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সাথে যৌথ অংশীদারিত্বে ইভেন্টটির আয়োজন করে এলসালভাদর, নাইজেরিয়া, পর্তুগাল ও শ্লোভাকিয়া মিশন। এতে সহ-অংশীদারিত্ব করে জাতিসংঘ সচিবালয় ও ইউনেস্কো।
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিশেষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি। এছাড়া অনুষ্ঠানটি উপলক্ষে শুভেচ্ছাবাণী প্রদান করেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ও নিউইয়র্ক সিটির মেয়র।
অনুষ্ঠানের বক্তারা যাতে নিজ নিজ মাতৃভাষায় বক্তব্য রাখতে পারেন সেজন্য এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের ছয়টি অফিশিয়াল ভাষায় গোটা অনুষ্ঠানটি অনুবাদের সুব্যবস্থা রাখা হয়। বাংলাদেশের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন এর শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম সঙ্গীত-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি..’ একাধিক ভাষায় উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানটিতে মরক্কো, এলসালভেদর, শ্লোভাকিয়া ও পর্তুগালের সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও ছিল মনোমুগ্ধকর। এছাড়া জাতিসংঘ সচিবালয় এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সভাপতির কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাগণের স্ব স্ব ভাষায় রেকর্ডকৃত বহুভাষিক ভিডিও বার্তা পরিবেশন করা হয় অনুষ্ঠানটিতে। জাতিসংঘ ওয়েব টিভিতে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদগণ এবং ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম যার চুড়ান্ত পরিণতি পায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মাধ্যমে। মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশীদের উদ্যোগকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে ইউনেস্কোর মাধ্যমে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর পূর্ণ স্বীকৃতি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
Leave a Reply