১১ রবিউস সানি বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (র.)এঁর ফাতেহা-ই- ইয়াজ দাহম
১১ রবিউস সানি (৭ নভেম্বর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ) রোজ সোমবার বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (র.)এঁর ফাতেহা-ই- ইয়াজ দাহম।
ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম হলো আউলিয়া কুলের শিরমণি রুহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত বড় পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (র.) এর ওফাত দিবস। হিজরি ৫৬১ সনের ১১ রবিউসসানি তিনি ওফাত লাভ করেন। ইয়াজদাহম,ফারসি শব্দ, যার অর্থ এগারো। ফাতিহা-ই- ইয়াজদাহম বলতে এগারো তম দিনকে বোঝায়। এই ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম আব্দুল কাদির জিলানী (র.)এঁর স্মরণে পালিত হয়।
ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মনেতা হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (র.)এঁর নাম প্রত্যেক মুসলমানের কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনে তার প্রভাব অপরিসীম। তার জীবনী ও কীর্তিগাথা মুসলমানদের হৃদয়ে চিরদিন জীবন্ত হয়ে থাকবে। আল্লাহর ওলি বড় পীর হজরত আবদুল কাদির জিলানী (র.) এর ওফাত দিবস উপলক্ষে মুসলমানদের দোয়া অনুষ্ঠানই হচ্ছে ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম’। এ দিন মুসলমানদের ঐচ্ছিক ছুটির দিন।
একজন আদর্শ পুরুষ হিসেবে বিশ্ব জগতে মুসলমানদের কাছে হযরত বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (র.)কে পরম ভক্তি, শ্রদ্ধার সঙ্গে চিরকাল স্মরণ করবে। পৃথিবীতে আল্লাহ পাকের প্রেরিত নবী-পয়গম্বর এসেছেন ১ লাখ বা ২ লাখ ২৪ হাজার। অন্যদিকে কামেল পীর, অলি, দরবেশ, ফকির যে কত এসেছেন তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু সব পীর, ফকির, দরবেশ, অলির সেরা ছিলেন হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (র.) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর ওফাতের প্রায় ৫০০ বছর পর জন্মগ্রহণ করেন। তখন ইসলাম ধর্ম এক নাজুক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছিল।
পবিত্র কোরআন ও আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আদর্শ ভুলে মানুষ বিপথে পা বাড়িয়েছিল, ঠিক এমনি সময় হযরত বড়পীর ইসলামের পথে মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন। মাতৃগর্ভেই তিনি পবিত্র কোরআনের ১৮ পারা হেফজ করেন।
হযরত আব্দুল কাদির জিলানীর (র.) সময়কালে ইসলামী সাম্রাজ্য সুদূর স্পেন থেকে ভারতবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কিন্তু সাম্রাজ্যের ভেতরের অবস্থা ছিল অত্যন্ত নাজুক। তখন মুসলমানদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ও চারিত্রিক সহ সর্বক্ষেত্রে ছিল এক নৈরাজ্যকর অবস্থা। এমনি এক যুগ সন্ধিক্ষনে হযরত বড়পীর (র.) আল্লাহ প্রদত্ত রুহানী ও ইলমী শক্তি বলে ইসলামের জটিল ও কঠিন ইসলামী তথ্য ও তাত্ত্বিক সমাধান কল্পে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত করেন। হজরত আবদুল কাদির জিলানী (র.)এঁর বাবার নাম সৈয়দ আবু সালেহ এবং মায়ের নাম বিবি ফাতেমা। হজরত আবদুল কাদির জিলানি (র.) ৪৭০ হিজরিতে ইরানের জিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাগদাদের মহান পীর হজরত আবু সাঈদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন মাখরুমির (র.) কাছে মারেফাতের জ্ঞানে পূর্ণতা লাভ করেন এবং খেলাফত প্রাপ্ত হন।
এ কথা অনস্বীকার্য হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (র.)এঁর অবদান বিশ্বে অনন্য। তিনি মুসলিমদের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ দিনে আত্মার শান্তির জন্য আত্মার মুক্তি লাভের জন্য মিলাদ মাহ্ফিল দোয়া মুনাজাত সেমা মাহ্ফিল শিন্নী সালাত ও তার জীবনী আলোচনা করা হয়। ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সেই সময় ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মনেতা হযরত বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানীর অবদান অনেক রয়েছে। আল্লাহ এই ওলি ও বন্ধুর জীবন এবং কর্ম আলোচনার মধ্য দিয়ে সবাই দিনটিকে স্মরণ করে থাকেন।
হযরত গাউছে পাক বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (র.) এর বক্তব্য সম্বলিত কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ আজো মুসলিম সমাজের পাথেয় হিসেবে আলোক বিকিরণ করছে। যেমন, গুনীয়াতুত তালেবীন, ফতহুল গায়ব, ফতহুর রাব্বানী এবং তারই রচিত কাছিদায়ে ‘গাউছিয়া’ এলমে মারেফতের অমূল্য সম্পদ।
গাউছে পাক (র.) এর জীবন থেকে আমাদের জন্য অনুসরণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। তিনি বলেছেন, জীবনে একজন মুমিন ব্যক্তির জন্য তিনটি বিষয় খুবই প্রয়োজন। ১) সর্বাবস্থায় আল্লাহর আদেশ মেনে চলা। ২) আল্লাহর নিষিদ্ধ সকল বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখা। ৩) নিজের কাছে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা।
হযরত রাসূলে করীম (সা.) আম্বিয়া কেরামের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী-তেমনি গাউছুল আজম (র.) আউলিয়ায়ে কেরামের মধ্যে শীর্ষ স্থানের অধিকারী। তিনি রূহানী জিন্দেগীর যে মৌল যোগসূত্রের সন্ধান দিয়ে গেছেন তা জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষকে হেদায়তের পথপ্রদর্শন করবে। ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ধর্মনেতার মাজার শরীফ ইরাকের বাগদাদে অবস্থিত রয়েছে।
Leave a Reply