আজ থেকে শুরু হচ্ছে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব
“এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে। যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টান জাতি গোত্র নাহি রবে।” – এ কথা বলেছেন মহাত্মা লালন শাঁই। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাঁইজীর গান, বাউল মেলা ও সাধুসংঘের মধ্য দিয়ে আজ শনিবার থেকে কুষ্টিয়া শহরের সংলগ্ন কালীগঙ্গা নদীর তীরে ছেউড়িয়ায় শুরু হচ্ছে তিনদিন ব্যাপী লালন স্মরণোৎসব-২০২৩।
মরমী এ সঙ্গীত সাধকের বার্ষিক স্মরণোৎসব উপলক্ষে তাঁর সাধন-ভজনের তীর্থ স্থান ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গন পরিণত হয়েছে সাধুসঙ্গ মেলা অতঃপর উৎসবের পল্লীতে। তাঁরা মনে করেন, মানবধর্মই বড় ধর্ম। একসাথে এভাবে সাধুসঙ্গ করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধু-গুরুর কৃপা ছাড়া মানুষ মুক্তি পেতে পারে না। তার কৃপায় মানুষ সঠিক পথ দেখে। দেশ-বিদেশ থেকে এখানে আগমন ঘটেছে লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজনসহ অসংখ্য মানুষের। উৎসবে ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে স্মরণোৎসবে থাকবে লালনের স্মৃতিচারণ করে আলোচনা, লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান ও লালন গ্রামীণ মেলা।
কুষ্টিয়া শহরের সংলগ্ন কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নদীর তীরেই ছেউড়িয়ার লালন সমাধি। বাংলা ১২৯৭’র পহেলা কার্তিক ও ইংরেজী ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে এখানেই মরমী সাধক লালন শাঁইজীর শেষ শয্যা রচিত হয়। গবেষকদের মতে, বাউল সাধক ফকির লালন শাহ’র জীবদ্দশায় দোল পুর্ণিমা উপলক্ষে পালন করা হতো দোল উৎসব। আর দোল পুর্ণিমাকে ঘিরেই বসতো সাধু সংঘ
লালনের সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় লালন একাডেমীও প্রতিবছর এ উৎসবটিকে ‘লালন স্মরণোৎসব’ হিসাবে পালন করে আসছে। তবে লালন অনুসারীরা দিনটিকে ‘দোল পূর্ণিমা’ উৎসব হিসাবেই পালন করে থাকেন।
সাধুদের মতে, সত্যিকার অর্থে লালন অনুসারীরা দোল পূর্ণিমার এ রাতটির জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। সাঁইজির রীতি অনুসারে দোলপুর্ণিমার রাতের বিকেলে অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার দোলসঙ্গ শুরু হয়। চৈত্রের পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নার ছটায় আর মাতাল হাওয়ায় গানে গানে বাউল সাধকরা হারিয়ে যায় ভিন্ন কোনো জগতে। পরের দিন চারটায় ‘পুণ্যসেবা’ দিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ করে আখড়াবাড়ি ত্যাগ করেন বেশির ভাগ সাধু। প্রকৃত সাধুসঙ্গের অধিবাস শেষ হলেও লালন একাডেমি আয়োজিত মূল মঞ্চে লালনগীতি ও লালনমেলা চলে তিন দিন। লালন স্মরনোৎসব ঘিরে কালীগঙ্গা নদীর ধারে প্রতিবছরই বসে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল গ্রামীণ মেলা।
Leave a Reply