মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, কেন্দ্রীয় কমিটি'র
বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস উপলক্ষে আজ ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিসে আলোচনা সভার আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, কেন্দ্রীয় কমিটি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম প্রিন্স।
সভাপতির বক্তব্যে মাহবুবুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘শোকাবহ ৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস। তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবের নামে ১৯৭৫ সালের এদিন থেকে পাকিস্তানের গুপ্তচর খুনী জিয়াউর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের হত্যার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবের নামে প্রথমে হত্যা করা হয় তিন খ্যাতনামা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম), কে এন হুদা (বীর উত্তম) এবং এ টি এম হায়দার (বীর বিক্রম) কে বিনা বিচারে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে খুনী জিয়া। ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ ভোর রাতে ৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানে বন্দি জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে যায় বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুকের ল্যান্সার বাহিনীর একটি দল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার অন্যতম ঘাতক ল্যান্সার মহিউদ্দিন ছিলো এই দলের নেতৃত্বে। তারা খুনী জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসে খুনি কর্ণেল রশিদের দুই নম্বর অ্যাটিলারি রেজিমেন্টের দপ্তরে। জিয়ার নির্দেশেই দশম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দপ্তরে অবস্থানকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ, এন হুদা এবং এম হায়দারকে একেবারে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে দুজন কোম্পানি কমান্ডার আসাদ এবং জলিল। খুনী জিয়া নিজেকে অবৈধভাবে সেনাপ্রধান ও ডেপুটি চিফ মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ঘোষণা করে। একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে খুনী জিয়ার মরণোত্তর বিচারের দাবি জানাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড৷’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রে খুনী জিয়ার তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবের নামে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য ও কর্মকর্তা হত্যার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহ্যাস স্পষ্ট করে বলেছেন এদিন উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা একজন মহিলা (হামিদা) ডাক্তারসহ ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এমনকি একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকেও এসময় হত্যা করা হয়। ডেন্টাল সার্জন করিম, ক্যাপ্টেন আনোয়ার, ল্যাফটেনেন্ট মোস্তাফিজ, বিমানবন্দরে আরেকজন অফিসার, মেজর আজিম, অডিন্যান্স মেস থেকে তিনজন অফিসার। যারা বলে বিপ্লব ও সংহতি, তাদের কাছে জানতে চাই, কীসের বিপ্লব? খুনি জিয়াকে মুক্ত করার নাম বিপ্লব? কার সাথে সংহতি? বঙ্গবন্ধুর খুনী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাকারীদের সাথে কিসের সংহতি? ৭ নভেম্বর খুনী জিয়া মুক্ত হয়েই ঠান্ডা মাথায় তালিকা করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা শুরু করেছিল। খুনী জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণের পর, কেবল ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত (২ মাসে) ১১৪৩ সৈনিককে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। বিশেষ করে তার সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছিল। ৭ নভেম্বর বিপ্লব নয়, শুরু হয়েছিল গণহত্যা। মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে খুনী জিয়ার মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসার ও সৈনিকদেরকে হত্যা করার অপরাধে পাকিস্তানের গুপ্তচর খুনী জিয়ার মরণোত্তর বিচার এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা খুনী জিয়ার দোসর বিএনপি-জামাতের রাষ্ট্রবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র কঠোরভাবে প্রতিহত করার লক্ষ্যে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।’
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি আজিম উদ্দিন লিটন, সুজা সরকার জয়, কানিজ ফাতেমা, দপ্তর সমন্বয়ক মুহাম্মদ নূর আলম সরদার, প্রচার সম্পাদক কামরুজ্জামান বিপ্লব প্রমুখ।
Leave a Reply