বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে শুধু দোকান নয়, পুড়েছে হাজারো পরিবারের স্বপ্ন আর ঘাম ঝরানো রক্ত
বঙ্গবাজার পোশাকের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসাকেন্দ্র। ঈদের আসছে, আর বেশ কয়েক দিন পরেই ঈদ। মুসলমানদের বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে বঙ্গবাজারের সব দোকানেই বিপুল পরিমাণ কাপড় মজুত করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোর ছয়টায় হঠাৎ এই মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগে। যা পরে ছড়িয়ে পড়ে বঙ্গমার্কেটের সঙ্গে লাগোয়া মহানগর শপিং মার্কেট, আদর্শ মার্কেট, ইসলামিয়া ও এনেক্সকো টাওয়ারে। এসব মার্কেটে আগুন লেগে তছনছ হয়ে যায় কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর দোকান। এ আগুনে শুধু দোকান নয়, পুড়েছে হাজারো পরিবারের স্বপ্ন আর ঘাম ঝরানো রক্ত।
ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক হিসাবে, আগুনে পাঁচ হাজারের মতো দোকান পুড়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই আগুনে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের ৮ জন কর্মীসহ অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের দুজন কর্মীর অবস্থা গুরুতর।
এদিকে সরেজমিনে আগুন লাগার খবর পেয়েই তড়িঘড়ি করে বঙ্গবাজারে ছুটে আসেন ব্যবসায়ী মো. ওমর ফারুক। এসে দেখেন মার্কেটে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আগুনের এ ভয়াবহতা আর নিজের পরিবারের ভবিষ্যতের চিন্তায় দুই হাত তুলে মোনাজাত করে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন ওমর ফারুক। আর কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, বঙ্গবাজার মার্কটে তার চারটি দোকান ছিল। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে চারটি দোকানে গত সপ্তাহে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মালামাল তুলেছেন। কিন্তু আগুন সব পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, করোনার পর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ও গ্রামে কিছু জমি বন্ধক রেখে মালামাল তুলেছিলাম। এখনতো আমার কিছুই রইলো না। না আছে দোকান, না আছে মালামাল। আমি কোথায় যাবো, কী করবো?
ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হাসান গার্মেন্টসের মালিক ইয়াসিন আহমেদ বলেন, ‘ও ভাই, কিছু নাই, সব পুইড়া শ্যাষ। কয়েকদিন আগে গোডাউনে ৭৫ লাখ টাকার মাল তুলছি। আমার দুই কোটি টাকার মালামাল পুইড়া ছাই হয়ে যাচ্ছে। গোডাউন, দোকান সব শেষ। আমি কী করবো?’
রিয়াজুল গার্মেন্টস, খান ফ্যাশন, এস এ গার্মেন্টস, খান শাড়ি বিতানসহ বঙ্গমার্কেটে ৫টি দোকান ছিল ব্যবসায়ী মো. মামুনের। ঈদকে সামনে রেখে ৫টি দোকানে ১০ কোটি টাকার মালামাল তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু আগুনে এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এ ব্যবসায়ী কাঁদছিলেন আগুন থেকে বাঁচাতে পারা অল্পকিছু মালামালের বস্তার ওপর বসে।
ব্যবসায়ী মামুন বলেন, আমার জীবনের সব উপার্জন যে আগুনে পুড়ে গেলো, এই ক্ষতির দায় নেবে কে? কে আমার ঋণ পরিশোধ করবে? আমার তো কিছুই নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। এ রকম হাজার জনের কান্না আর দুঃখ প্রকাশ করেন অনেকে। আবার কেউ কেউ নিরবে শুধু কান্নায় করছেন।
Leave a Reply