কুষ্টিয়াকে ভালোবেসে
‘লাঙ্গল দিয়ে চাষ দিয়েছি- ইতিহাস লেখায়, ইতিহাস চর্চায়’…
ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে কুষ্টিয়া জেলার মানুষের রয়েছে গৌরবান্বিত ভূমিকা। সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য এতদঞ্চলের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দাবিদার। বহু ইতিহাস গবেষক তাঁদের ইতিহাসের পাতায়, জ্ঞানীগুণী তাঁদের চিন্তা চেতনায়, কবিগণ তাঁদের কবিতার ছন্দে, নাট্যকারগণ তাঁদের নাটকে, সাহিত্যিকগণ তাঁদের নিজস্ব ভঙ্গি দিয়ে সাহিত্যের কথামালায়, বহু দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা লেখকদের ক্ষুরধার লেখনীতে এবং আপামর সকল স্তরের আলোচক, সমালোচক স্বীকার করে নিয়েছেন কুষ্টিয়াকে সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে।
পদ্মা-গড়াইয়ের অজশ্র জলরাশি কুষ্টিয়ার নদী তীরের মাটি ও মানুষকে কখনো করেছে নি:স্ব ভিখারী, আবার কখনো শিখিয়েছে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার লড়াই। হারতে নয় জিততে শিখিয়েছে নদী তীরের মানুষগুলোকে। পদ্মা-গড়াইয়ের জলরাশির তান্ডবে এখানকার অসহায় মানুষগুলো গৃহহীন হলেও পদ্মা-গড়াইকে দোষারোপ করেনি বরং এই গঙ্গায় দুধ ঢেলে পুঁজো দিয়েছে সাহস সঞ্চয় করে টিকে থাকার প্রত্যয়ে। রবীন্দ্রনাথ যেমন ভাসিয়েছেন গৌরিতীরে লেখনীর ভেলা পদ্মার জলরাশির চাকচিক্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেয়ে উঠেছেন অমর কবিতা গান সেই নদীয়া কুষ্টিয়াকে কী করে ভুলবে, কুষ্টিয়ার সরলমনা মানুষগুলো। প্রমিত বাংলা ভাষায় যাঁদের কথার আলেখ্য সেই ভাষাভাষিদের অন্তরের কৃষ্টি সাধনায় উন্মোচিত হয়েছে অঞ্চলের ভাষায় মাধুর্য্যতা। উত্তরের হিমালয় থেকে নেমে আসা মৌসুমী বায়ুর ছোঁয়ায় আর দক্ষিণের হিমশীতল বায়ুর মুগ্ধতায়, বাউলের একতারা সুরের মুর্ছনায়, হেমন্তের নবান্নের উৎসবে মেতে ওঠা এ অঞ্চলের মানুষের উৎসব, আনন্দ, বেদনায়, কবিতায়, সাহিত্যে, যাত্রাপালা, নাচগান, দোলপূর্ণিমা, রথযাত্রা, শিল্প সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেকটাই অগ্রসর হিসেবে এদেশে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়া জেলা তারই এক যথার্থ বহি:প্রকাশ।
আমি মনে করি, আঞ্চলিক ইতিহাস রচিত না হ’লে জাতীয় ইতিহাস রচনা করা অত্যন্ত কঠিন; তেমনি জাতি হিসেবে নিজের সত্যিকার পরিচয় জানা আমাদের সকলের কর্তব্য।
লেখকঃ- ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন ও ড. সারিয়া সুলতানা।
Leave a Reply