শেষ হল লালন শাঁহজির তিন দিনের অনুষ্ঠান, গ্রামীণ মেলা থাকছে আরও দুইদিন

অথর
কুষ্টিয়া প্রেস ডেক্স :  কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ
প্রকাশিত :২০ অক্টোবর ২০২৫, ২:৪১ পূর্বাহ্ণ
শেষ হল লালন শাঁহজির তিন দিনের অনুষ্ঠান, গ্রামীণ মেলা থাকছে আরও দুইদিন

■ কুষ্টিয়া প্রেস (সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতায়) ■ ফকির লালন শাঁহজির ১৩৫ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন ছেঁউরিয়া আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হল। এখন পাঁচদিনের গ্রামীণ মেলা থাকছে আরও দুইদিন।

রবিবার রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের আলোচনায় জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমীর সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার(অতিরিক্ত সচিব)মো: ফিরোজ সরকার। আলোচনা সভার পর মুক্ত মঞ্চে লালন শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই গান।

এবারই প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয় লালন তিরোধান দিবস। লাখো মানুষের এমন জনসমাগম গেল দুই দশকে কেউ দেখিনি বলে জানিয়েছেন বাউল, ভক্ত ও আয়োজকরা। সরেজমিন দেখা যায়, আখড়াবাড়িতে কমতে শুরু করেছে ভক্তবৃন্দ। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে লালনেন গান। দলে দলে বিভিক্ত বাদ্যযন্ত্রের তালে গান পরিবেশন করছেন তারা। মুক্তমঞ্চে চলছে গান। মঞ্চের সামনেই বসেছে গ্রামীণ মেলায়। সেখানে বেশ ভিড় এখনও।

লালন দর্শন মতের জানা গেছে, গুরুর হাতে বায়েত গ্রহণ করে সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভক্তি-ভালবাসার দিয়ে সন্তুষ্টি অর্জন করা। সকল ধর্মের নারী-পুরুষ সবাইকে একজন গুরুর দীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, পারে কে যাবি নবির নৌকাতে আয়। রুপ কাঠের ই নৌকাখানি নাই ডুবার ভয়। আরো লিখেছেন, যে মুর্শিদ সেই তো রাসুল, ইহাতে নাই কোন ভুল, খোদাও সে হয়। লালন কয় না এমন কথা কোরানে কয়। মানুষ ছেড়ে ক্ষেপা রে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার, সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে,মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসাবে মরমী সাধক লালন শাহের আবির্ভাব ঘটে ছেঁউড়িয়াতে। লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও আজো অজানায় রয়ে গেছে তাঁর জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূর্ণ লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমনে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপামত্মর ও সাধন জীবনে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে মলম শাহের আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক গুরুর আসনে অধিষ্টিত হন। প্রথমে তিনি কুমারখালির ছেঁউড়িয়া গ্রামের গভীর বনের একটি আমগাছের নীচে সাধনায় নিযুক্ত হন। পরে স্থানীয় কারিকর সম্প্রদায়ের সাহায্য লাভ করেন। লালন ভক্ত মলম শাহ আখড়া তৈরীর জন্য ষোল বিঘা জমি দান করেন। দানকৃত ওই জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরী করা হয়। সেই ঘরেই তাঁর সাধন-ভজন বসতো। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্যভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন। তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমী সাধক দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শেয়ার করে  সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published.