কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ছিল অসংখ্য দর্শনার্থীর ভীড়ে মুখরিত

অথর
কুষ্টিয়া প্রেস ডেক্স :  কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ
প্রকাশিত :১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১:২৫ পূর্বাহ্ণ
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ছিল অসংখ্য দর্শনার্থীর ভীড়ে মুখরিত

■ কুষ্টিয়া প্রেস (সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতায়) ■ কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়া বাড়িতে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন শনিবার অসংখ্য বাউল, দর্শনার্থী, সাধু, গুরু, বৈষ্ণবের আগমনের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠে। আজ রবিবার সমাপনি। অতঃপর বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫ তম তিরোধান দিবসের সাধুর মেলা আজ ভাঙ্গবে।

শনিবার দ্বিতীয় দিনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪- আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৩- আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান,অনুষ্ঠানে আলোচকের বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আল মামুন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমীর সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন।

এদিকে একাডেমীর পক্ষ থেকে দুপুরে আগত সাধু-বাউলদের মধ্যে সাদা ভাত, মসলাবিহীন তরকারী আর মাছ দিয়ে পুর্ণ সেবা নিয়ে লালন ভক্ত বাউলরা আঁখড়াবাড়ী ছাড়তে শুরু করেছেন। যেখানে মিলন ঘটেছে নানা ধর্ম, নানা বর্ণের মানুষের। কেউ এসেছেন ধবধবে সাদা পোশাকে, আবার কেউ গেরুয়া বসনে। সাঁইজির টানে এ ধামে বাউল ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেছে। সমাধিতে ফুল, আতর, গোলাপ ছড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন হাজারো শিষ্য-ভক্ত। এদিকে উৎসবে শামিল হতে দেশের বাইরে থেকে ছুটে এসেছেন অনেকে। ‘বাড়ির পাশে আরশী নগর, মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই কুল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, সত্য বল সুপথে চল, এলাহি আলামিন গো আলা বাদশা আলমপনা তুমি’ এ রকম অসংখ্য লালনসংগীতের সুরের মূর্ছনায় তারা মাতিয়ে তুলেছেন বাউলধাম। লালন মাজারের আশপাশে ও মরা কালী গঙ্গার তীর ধরে বাউলেরা ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে সাঁইজিকে স্মরণ করেছেন গানে গানে। বাউল-ফকিরদের সঙ্গে সুর মেলাতে ভুল করছেন না ভক্তরাও। দূর-দূরান্ত থেকে সাদা বসনে বাউল সাধকরা এসেছেন দলে দলে একতারা-দোতারা, ঢোল-খোল, বাঁশি, প্রেমজুড়ি, চাকতি, খমক হাতে। ক্ষণে ক্ষণেই খন্ড খন্ড মজমা থেকে নৃত্যসঙ্গীতের তালে তালে ছলকে উঠছে যেন উত্তাল ভাববাদী ঢেউ। কেউ শুধু লুঙ্গি পরে নাচছেন, গাইছেন। কারও উদোম গা। গলায় বিচিত্র বর্ণ ও আকারের পাথরের মালা। হাতে বিশেষ ধরনের লাঠি ও বাদ্যযন্ত্র। লালন ধামের ভেতর ও বাইরে নিজেদের পছন্দমতো জায়গা করে নিয়ে গান-বাজনা করছেন তারা। বিচিত্র সব বাদ্যযন্ত্রে তুলছেন হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া লালনগীতি। আখড়ার একটি দল থামছে তো অন্যটি জমিয়ে রাখছে চারপাশ। সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে বাউলের চারণভূমিতে আসা হাজার হাজার লালন-ভক্ত, সাধু-গুরু কালীগঙ্গায় গোসল সেরে পুর্ণসেবা গ্রহণ করেন। আর এর মাধ্যমেই শেষ হয়েছে সাধুসঙ্গ। কোন রাগ- ক্ষোভ নেই বাউল ও ভক্তঅনুসারীদের। আজ রবিবার বিকেলে আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে লালন তিরোধান দিবসের আয়োজন। আলোচনা সভা শেষে লালন মঞ্চে শুরু হয় লালন একাডেমী ও শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীদের অংশগ্রহনে শুরু হয় লালন সংগীতের আসর।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শেয়ার করে  সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published.