শ্বেতপত্র: হাসিনার আমলে ২৪ হাজার কোটি ডলার পাচার, ব্যয়ের ৪০ শতাংশ লুটপাট
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে বিভিন্ন দেশে ২৪ হাজার কোটি ডলার অর্থ পাচার করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী সরকার ক্ষমতাকে মনে করেছিল অর্থপাচার, লুটপাট, অনিয়মের প্রতিষ্ঠিত লাইসেন্স। এই সময়ের ব্যবধানে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এবং তাদের সরাসরি প্রশ্রয়ে রাজনীতিবিদ, আমলা, এমপি, মন্ত্রী, পুলিশসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা শুধু দেশের বাইরে টাকাই পাচার করেছেন ৩০ লাখ কোটিরও বেশি। আরেক হিসেবে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে- এমনটা বলা হচ্ছে শ্বেতপত্রে।
‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এসব অর্থ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অনিয়মিত ঋণের মাধ্যমে পাচার হয়েছে, যা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ ছাড়া ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে যে ব্যয় হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক ভারসাম্য, ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব, ব্যয়, মেগাপ্রকল্প, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও সমতা, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী, জলবায়ু ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে কমিটি।
দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিশেষ করে ব্যাংকিং, অবকাঠামো এবং সরকারি খাতের দুর্নীতির বিস্তর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
শ্বেতপত্রে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরার পাশাপশি বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে স্বাধীন তদন্ত সংস্থা গঠনের সুপারিশ, সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিতে ‘ওয়েলথ ট্যাক্স’ প্রবর্তনের প্রস্তাব , বিত্তশালীদের জন্য উচ্চ কর প্রবর্তনের সুপারিশ , শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বৈষম্য দূরীকরণে স্থায়ী নীতির উন্নয়ন, কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনের পরামর্শ, কর দাতার সংখ্যা বৃদ্ধি, কর অব্যাহতি ও ফাঁকি কমানোর জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, মূল্যস্ফীতি কমাতে বিনিময় হার ও মুদ্রানীতি এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনয়ন।
গত পাঁচই অগাস্ট সরকার পতনের পর ২৮শে অগাস্ট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র জানতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। কমিটির আনুষ্ঠানিক নাম ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’।
Leave a Reply