পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী(সা.) সুদূর অতীতেও ছিল, সৃষ্টিকুলও নবীর আগমনের খুশীতে মেতেছিল
বিশ্ব জাহানের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহা মানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) -এর শুভ আগমনের এই মহীয়তি দিনে সমস্ত সৃষ্টি আলোকিত হয়ে ওঠে। আল্লাহ তার প্রিয় হাবীবের জন্যই দুনিয়ারসৃষ্টি করেন, যাকে সমস্ত সৃষ্টির জন্য রহমত করে প্রেরণ করেছেন। সৃষ্টিকূলও রাসূল (সাঃ) আগমনের খুশীতে শুকরিয়া সরূপ সিজদায় লুটিয়ে পড়েন।
চন্দ্র মাস তথা হিজরি সনের ১২ রবিউল আউয়াল পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারি, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মায়ের কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে আসেন। এজন্য এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত।
ঈদে মিলাদুন্নবী সুদূর অতীতে ছিল:-
মীলাদুন্নবীর বর্ণনাঃ
সুদূর অতীতকালে কিভাবে মুসলমানগণ ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করতেন- তাঁর একটি বিস্তারিত বর্ণনা আল্লামা শাহাবুদ্দীন কাস্তুলানী (رحمة الله عليه) মাওয়াহেবে লাদুনিয়া কিতাবে বিধৃত করেছেন। মীলাদুন্নবী [ﷺ] সমর্থক বিজ্ঞ মোহাক্বেক ওলামায়ে কেরাম এবং ফকিহগণ নিজ নিজ গ্রন্থে দলীল স্বরূপ আল্লামা কাস্তুলানী (رحمة الله عليه)’র এই দুর্লভ প্রমাণাদি লিপিবদ্ধ করেছেন। ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] পালনকারী এবং সমর্থক ওলামা ও নবীপ্রেমিক মুসলমানদের অবগতির জন্য উক্ত মন্তব্য কোটেশন আকারে অনুবাদসহ নিম্নে পেশ করা হলো।
ولا زال أهل الإسلام يحتفلون بشهر مولده عليه السّلام، ويعملون الولائم، ويتصدقون في لياليه بأنواع الصدقات،
ويظهرون السرور، ويزيدون في المبرات، ويعتنون بقراءة مولده الكريم، ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم ومما جرب من جواصه أنه امان فى ذلك العام وبشرى عاجلة بنيل البغية والمرام فرحم الله امرأ اتخذ ليالى شهر مولده المباركة اعيادا (المواهب اللدنية والأنوار المحمدية صفحة ١٩).
অর্থঃ “সমগ্র মুসলিম উম্মাহ সুদূর অতীতকাল থেকে নবী করীম [ﷺ]-এঁর পবিত্র বেলাদত উপলক্ষে মাসব্যাপী সর্বদা মীলাদ-মাহফিল উদযাপন করতেন। যিয়াফত প্রস্তুত করে তারা লোকদের খাওয়াতেন। মাসব্যাপী দিনগুলোতে বিভিন্ন রকমের সদকা-খয়রাত করতেন এবং শরীয়তসম্মত আনন্দ উৎসব করতেন। উত্তম কাজ প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি করতেন। তাঁরা পূর্ণমাস শান শওকতের সাথে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত করতেন। যার বরকতে বরাবরই তাদের উপর আল্লাহর অপার অনুগ্রহ প্রকাশ পেতো। মিলাদ মাহফিলের বৈশিষ্ট সমূহের মধ্যে এটা পরীক্ষিত বিষয় যে, মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানের বরকতে ঐ বৎসর আল্লাহর পক্ষ হতে নিরাপত্তা কায়েম থাকে এবং তড়িৎগতিতে তা মনোবাঞ্ছা পূরণের শুভ সংবাদ বহন করে নিয়ে আসে। অতএব- যিনি বা যারা মীলাদুন্নবী মাসের প্রতিটি রাত্রকে ঈদের রাত্রে পরিণত করে রাখবে- তাঁদের উপর আল্লাহর খাস রহমত বর্ষিত হবে।”
(মাওয়াহেবে লাদুনিয়া, মা ছাবাতা বিছছুন্নাহ্)
হযরত আবু আমের আনসারীর মিলাদ মাহফিলঃ হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, আমি একদিন নবী করীম [ﷺ]-এঁর সাথে মদীনাবাসী আবু আমের (رضي الله عنه)’এঁর গৃহে গমন করে দেখতে পেলাম- তিনি তাঁর সন্তানাদি ও আত্মীয়-স্বজনকে একত্রিত করে নবী করীম [ﷺ]-এঁর পবিত্র বেলাদত সম্পর্কিত জন্ম বিবরণী শিক্ষা দিচ্ছেন এবং বলছেন যে, “আজই সেই পবিত্র জন্ম তারিখ।” এই মাহফিল দেখে নবী-করীম [ﷺ] খুশী হয়ে তাঁকে সুসংবাদ দিলেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য (মীলাদের কারণে) রহমতের অসংখ্য দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাগণ তোমাদের সকলের জন্য মাগফিরাত কামনা করছেন” (আল্লামা জালালুদ্দীন সায়ুতির সাবিলূল হুদা ও আল্লামা ইবনে দাহ্ইয়ার আত-তানভীর-৬০৪ হিঃ)।
আরবি হাদীসখানা প্রমাণস্বরূপ হুবহু নিম্নে পেশ করা হলো-
عن أبى الدرداء قال مررت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وهو يعلم وقائع ولادته لأبنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم فقال النبي صلى الله عليه وسلم أن الله فتح عليك أبواب الرحمة وملائكته يستغفرون لكم (سبيل الهدى لجلال الدين سيوطى _ التنوير)
(মীলাদের উপর প্রথম গ্রন্থ রচনাকারী আল্লামা আবুল খাত্তাব ইবনে দেহিয়া (৬৩৩ হি:) ঈদে মীলাদুন্নবীর উপর লিখিত “আত-তানবীর ফী মাওলিদিল বাশির আন নাযীর” গ্রন্থে এই মতটিকেই গ্রহণ করেছেন। কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মোস্তফা [ﷺ], হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)
এদিকে বাংলাদেশে দিনটি সরকারিভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালিত হয়। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, সত্য ও ন্যায়ের প্রশ্নে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন প্রস্তরকঠিন; কিন্তু ক্ষমা ও দয়ায় ছিলেন পানির মতো সরল। তার প্রতিটি কথা ও কর্মই মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।
বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিশ্বমানবতার জন্য অনিন্দ্যসুন্দর অনুসরণীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন; যা প্রতিটি যুগ ও শতাব্দীর মানুষের জন্য মুক্তির দিশারি হিসেবে পথ দেখাবে।
Leave a Reply