মাজারে হামলা করা গ্রহণযোগ্য নয় বলে ইসলামিক স্কলাররা বলছেন

অথর
কুষ্টিয়া প্রেস ডেক্স :  কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ
প্রকাশিত :৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭:৩৯ অপরাহ্ণ
মাজারে হামলা করা গ্রহণযোগ্য নয় বলে ইসলামিক স্কলাররা বলছেন

মাজারে হামলা করা গ্রহণযোগ্য নয় বলে ইসলামিক স্কলাররা বলছেন। মাজার ভাঙ্গা নিয়ে যে ধরনের ক্যাম্পেইন চলছে, সেটিকে অন্যায় মনে করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

বিবিসি বাংলা নিউজের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মাজার ভাঙচুরকারীদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। তাদের বেশিরভাগই পাঞ্জাবী-টুপি পরিহিত ছিল। মাজারের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত করার পর তারা দান বাক্স ও পাশেই থাকা খাদেমের ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে নগদ টাকা ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

হামলার খবর শুনে অনেক জায়গায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় এটিকে প্রতিহত করেছে। সেইসাথে, ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্র মতে, “সব মাজারে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। কিছু হলে আর্মির সহযোগিতায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান গণমাধ্যমে বলেছেন, “আমরা এ ব্যাপারটি খুব সিরিয়াসলি দেখছি। এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।” এই ঘটনাটি “গ্রহণযোগ্য না” উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন যে তাদের পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত করে যেন কাজ করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।

এদিকে এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনও। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “মাজার ভাঙ্গা হোক, মসজিদ ভাঙ্গা হোক, মন্দির ভাঙ্গা হোক; এগুলো গর্হিত কাজ। যেগুলো যেভাবে আছে, সেগুলো সেভাবে থাকা দরকার।”

তিনি আরও জানান, “আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, আমাদের কম্যুনাল হারমোনি- ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট হওয়ার মতো কোনও ঘটনা যদি ঘটে, আপনারা আমাদের জানালে আমরা মুহূর্তের ভেতরে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।” “ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে উপাসনালয়ে যারা হামলা চালায়, তারা মানবতার শত্রু, তারা ক্রিমিনাল”।

এদিকে, নাগরিক টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১১ই জুলাই দিবাগত রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা অবস্থিত তিনশ’ বছরের পুরোনো বিবি সখিনার মাজার ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, রাতের আঁধারে কংক্রিটের ঢালাই ভেঙ্গে মাটি খুঁড়ে মাজার তছনছ করা হয়েছে। এই মাজারে বছরের পর বছর ধরে অনেকে বিশ্বাস থেকে মানত করতে আসতো। বিবি সখিনার মাজার ভাঙ্গার খবরটি নিশ্চিত করতে যোগাযোগ করা হয়েছিলো ঠকুরগাঁও পুলিশের সঙ্গে। সেখানকার পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ বিবিসিকে এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি বলেছেন যে বিবি সখিনার মাজার ভাঙ্গার বিষয়টি সম্বন্ধে তারা অবগত নয়। “আমাদের এখানে মাজার ভাঙ্গার কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে আমি জানি না।”

অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, তেসরা সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে ইসমাইল পাগলার মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ২৯শে অগাস্ট সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের পাশে আলী পাগলার মাজারও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া স্থানীয় শালগ্রাম জামে মসজিদের ইমাম গোলাম রব্বানীকে চাকরিচ্যুত করেন গ্রামবাসী। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এতে বলা হয়েছে, মাজারে হামলার আগে মাদ্রাসা ছাত্রসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার লোক স্থানীয় কান্দাপাড়া হাটে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা মাজারে হামলা চালান। মাজারের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত করার পর তারা দান বাক্স ও পাশেই থাকা খাদেমের ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে নগদ টাকা ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

এই দুই ঘটনার ব্যাপারে বিবিসি বাংলার সাথে কথা হয়েছে পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেনের সাথে। তবে তিনি জানিয়েছেন যে তিনি ইসমাইল পাগলার মাজারে হামলার ব্যাপারে জানেন। কিন্তু আলী পাগলার মাজার ভাঙ্গচুর করার ঘটনা সম্বন্ধে তিনি কিছু জানেন না। ইসমাইল পাগলার মাজারে ভাঙ্গচুরের কারণ সম্বন্ধে তিনি বলেন, “মাজারে গাঁজা খায়। বাদ্যবাজনা বাজায়। তা পারিপার্শ্বিকতার জন্য ডিজগাস্টিং পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।”

“মাজার পরিচালনা কমিটির লোকজন ও আশেপাশের ধার্মিক ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন তাদেরকে নিষেধ করার পরও এগুলো চলমান বিধায় দুই গ্রুপের মাঝে ঝামেলা হয়েছে।” তিনি জানান, সেখানে হামলার খবর শুনে তারা সেনাবাহিনীর সহায়তায় এটিকে প্রতিহত করেছে। সেইসাথে, ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শেয়ার করে  সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published.