লিঙ্গ বদলে পুরুষ হতে চান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী শহর কলকাতায় চলছে ‘প্রাইড মান্থ’। সমপ্রেমী, তৃতীয় লিঙ্গ, রূপান্তরকামী ইত্যাদি ‘অন্যরকম’ যৌনতার মানুষজন মন খুলে নিজেদের অধিকারের কথা বলছেন। এমন সময় এ সংক্রান্ত এক কর্মশালায় নিজের মনের কথা জানালেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্য। লিঙ্গ পরিবর্তন করে সুচেতনা থেকে ‘সুচেতন’ হতে চান তিনি।
যিনি শারীরিকভাবে মেয়ে হয়ে জন্মালেও মননে একজন পুরুষ এবং এইবার শারীরিকভাবেও লিঙ্গ পরিবর্তন করে ‘সুচেতন’ হতে চান। সেই লক্ষ্যে পা-ও বাড়িয়েছেন। এজন্য আইনি ও চিকিৎসাগত যা করা প্রয়োজন, তা তিনি এরই মধ্যে শুরু করেছেন। সম্প্রতি তিনি ঘর বেঁধেছেন বান্ধবী সুচন্দার সঙ্গে। দুজন থাকতে শুরু করেছেন একসঙ্গে। সুচেতনার বিশ্বাস, বাবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মা মীরা ভট্টাচার্য এ সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাবেন।
যে এলজিবিটিকিউ কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন সুচেতনা ভট্টাচার্য। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রভা রায়। সুপ্রভা নিজেও একজন রূপান্তরকামী। লিঙ্গ পরিবর্তন করিয়ে অপ্রতিম থেকে সুপ্রভা হয়ে উঠেছেন। ‘গৌরব মাসের গল্প’ শিরোনামে।
সুপ্রভা সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ পোস্ট করেন। সেখানেই সুচেতনার ‘সুচেতন’ হয়ে ওঠার কথা বলেন তিনি। সেখানেই প্রথম জানা যায় ‘শরীরে, মনে, সামাজিক প্রকাশনায় ট্রান্সম্যান রূপেই পরিচিত হয়েছে সুচেতন। কিন্তু এবার সে বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় লিঙ্গের ও প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের সংগ্রামে অবতীর্ণ করতে চান নিজেকে। এলজিবিটিকিউআইএ+ কমিউনিটির মানুষদের জীবন যন্ত্রণা ও লড়াই সংগ্রামে মিশতে চলেছেন সুচেতন।’
সুচেতনা নিজেও ওই কর্মশালা সম্পর্কে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সুচেতনা লিখেছেন, “আমার বাবা-মায়ের পরিচয় বড় কথা নয়। আমি এই আন্দোলনের অঙ্গ। ট্রান্সওম্যান হিসেবে আমাকে সামাজিক হেনস্তা হতে হয়েছে। এটা আমি চাই বন্ধ হোক। একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে, কীভাবে বাঁচব সে সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি। এর মধ্যে বাবা-মা অথবা পরিবারকে টানবেন না।’
সুচেতনা আরও বলেন, ‘পিআরসি-র ৮০তম প্রতিষ্ঠা বছর উদ্যাপন উপলক্ষে ১০ জুন, ২০২৩ অ্যাকশন টু হেল্থ অব দ্য এলজিবিটিকিউ+ কমিউনিটি ওয়ার্কশপে যোগদান করে আমি খুবই গর্বিত ও আনন্দিত। ওয়ার্কশপে প্রতিটি আলোচনার বিষয় সুচিন্তিত এবং প্রাসঙ্গিক। এলজিবিটিকিউ+ মানুষের অধিকার ও সমস্যা নিয়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম, যা আমার মতো ট্রান্সম্যানকে সমৃদ্ধ করেছে, উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এলজিবিটিকিউ+ মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেও খুব ভাল লেগেছে। তথাকথিত মূলস্রোত সমাজের চোখরাঙানি, উপহাস, ঘৃণাকে মোকাবিলা করে এঁরা যেভাবে লড়াই করছেন, এগিয়ে চলেছেন, তা আমার কাছে বিশেষ শিক্ষণীয়। পিআরসি-র উদ্যোক্তাদের এই প্রয়াসকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ এলজিবিটিকিউ+ বৃত্তের বাইরের সমাজসচেতন মানুষদেরও যাঁরা এই আন্দোলনের শরিক।’
Leave a Reply