কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী ২৫শে বৈশাখ পালন হোক দুই বাংলায় একই দিনে!
দুই বাংলার বাঙালির চিরকালের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বসাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র অতঃপর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন। আজ তাঁর ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। যদিও বাংলা তারিখ দিন অনুযায়ী বাংলাদেশে আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার ভারতে ২৫ শে বৈশাখ দিনটি তথা রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী যথাযথভাবে পালন করবেন। বিশ্বে তিনিই একমাত্র কবি যার রচিত গান দুটি দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়। তবে দুই দেশে বাংলা সন-পঞ্জিকা সংশোধন করে একই দিনে ২৫শে বৈশাখ দিন তথা রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী পালন করা উচিত। দুই দেশের সকল সুধীমহল ও সাহিত্যপ্রেমীদের রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী ২৫শে বৈশাখ দুই বাংলায় একই দিনে পালন করতে সোচ্চার হওয়া দরকার।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখে কলকাতায় জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রসাহিত্য ও সংগীত বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর তার রচিত গান (আমার সোনার বাংলা) বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। এছাড়াও তার অনেক গান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনুপ্রাণিত করেছিল বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের।
রবীন্দ্রনাথ দেড় শত বছর পেরিয়েও কবি বাঙালির মাঝে চিরজাগ্রত হয়ে আছেন। কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, নির্দেশক কিংবা চিত্রকর উপাধিতে ভূষিত করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়ের শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি। গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই ‘বনফুল’ প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তিনি অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেন। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হলো মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী। তার বিখ্যাত নাটক ডাকঘর, বিসর্জন, রক্তকরবী, অচলায়তন। তার বিখ্যাত উপন্যাস গোরা, নৌকাডুবি, শেষের কবিতা, চোখের বালি। তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি উৎসবে-সুখে-দুঃখে, সংগ্রামে দ্রোহে দুই বাংলা তথা ভারত-বাংলাদেশের মানুষের সাহিত্য-সাংস্কৃতিতে এক সাহস ও অনুপ্রেরণা।
বাঙালির প্রিয় কবি কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় পার করেন। সর্বোপরি সত্য যে, কুষ্টিয়ার শিলাইদহে থাকাকালীন তাঁর লেখা ঐতিহাসিক সাহিত্যকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে করেছেন এক স্মরণীয় ইতিহাস এবং পরিচিতি। বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে কবিগুরু ও বিশ্বকবি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়ে থাকেন। প্রতি বছরে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়। রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা, সংগীতানুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তিসহ তিনদিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। জানাযায়, আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৯১ সাল থেকে পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশে তিনি নিজেদের পরিবারের জমিদারি দেখা শুরু করেন। এর মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, পাবনার শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং উড়িষ্যার জমিদারিগুলো। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দীর্ঘ রোগ ভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনে মৃতু্যবরণ করেন।
Leave a Reply