মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ : বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ২০ লাখ টাকা দিলেন হিজড়ারা
‘হিজড়া’শব্দ উচ্চারণে কোনো কোনো সময় আমরা গালি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকি। এই হিজড়ারা পথে গঞ্জে শহরে বা গ্রামে ভিক্ষা বা চাঁদা তুলে জীবন নির্বাহ করে থাকে। বঙ্গবাজার নির্মম ট্রাজেডির পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য গঠিত তহবিলে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে সহায়তা প্রদান করেছে।
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা সময়ে চেয়ে-চিন্তে টাকা সহযোগিতা নিতেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা (হিজড়া)। এবারও ঈদের আগে টাকা সহযোগিতা নেওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারিয়ে আজ নিঃস্ব ব্যবসায়ীরা। তাই উল্টো তাদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন এ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। এবার ঈদে কোনাকাটা না করে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ২০ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন সারা দেশের হিজড়া সম্প্রদায়।
রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের স্থলে কয়েকশ হিজরা উপস্থিত হয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হাতে এ সহায়তার টাকা তুলে দেন।
সহায়তা দেওয়ার পর হিজড়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির দিপালী হিজড়া বলেন, বহু বছর ধরে আমরা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। আজকে তারা বিপদে পড়েছেন। তাই আমরা চিন্তা করেছি এবার ঈদের কেনাকাটা না করে, সেই অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দিবো।
তিনি বলেন, আমরা সারা দেশের হিজড়ারা একত্রিত হয়ে ২০ লাখ টাকা তুলেছি। সেই টাকা আজ এখানে তাদের (ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী) হাতে তুলে দিয়েছি। ব্যবসায়ীরা বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবো।
হিজড়াদের গুরুমা রাখি শেখ বলেন, আমরা মানুষের কাছ থেকে এক দুই টাকা করে উঠিয়ে উঠিয়ে এই টাকা জমিয়েছি। এখন আমরা সেটা মানবতার কল্যাণেই দিয়ে দিবো। এ টাকা কোনো ব্যবসায়ীর হাতে হাতে দেওয়া হবে না। পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা তহবিলে জমা দেওয়া হবে। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে হাতে এ টাকা পৌঁছে যাবে।
হিজড়াদের এ সহায়তাকে মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আজ হাতে পাওয়া টাকার মধ্যে সবচেয়ে আনন্দদায়ক হলো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ২০ লাখ টাকার সতায়তা। এটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এ কারণে আমরা ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ করবো, তাদের যেন কখনো অবহেলার চোখে না দেখা হয়। এখন থেকে আমরা হিজড়া জনগোষ্ঠীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবো।
এ সময় গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল মেয়র তানিয়া হক শোভা, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নামজুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ, এর আগে সকাল পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকার হিজড়াদের সরদারনী আলেয়া হিজড়া ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দুই লাখ টাকা সহায়তা দেন। তিনি এ টাকা হজের জন্য জমিয়ে ছিলেন।
Leave a Reply