সন্তানকে সদাচারণ, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মানবতার শিক্ষা দেওয়া
কবি ও লেখকেরা রসালো কবিতা- রম্য গল্প লেখেন, যা অতি শিক্ষণীয় আমাদের জন্য। আজ এমনই একটি গল্প ‘কুষ্টিয়া প্রেস’ তুলে ধরছেন পাঠকেদের মাঝে।
আমাদের সংগৃহীত গল্পটি হলঃ-
সন্তানকে সদাচারণ, নৈতিকতা, মূল্যবোধ,
জঙ্গলের রাজা মশাই ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দিলো – “কোনো বাচ্চাকে নিরক্ষর রাখা চলবে না। সবার জন্য যথাযথ শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে।”
সব ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে। পড়াশুনা শেষ হলে,, সবাইকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
সব বাচ্চারা স্কুলে এ্যডমিশন হয়ে গেলো। রাজামশাইয়ের স্কুল ,, সবাইকে যথাযথ শিক্ষা দেওয়া হবে।
শুরু হলো সর্ব শিক্ষা অভিযান!
হাতির বাচ্চা স্কুলে এলো।। বাঁদর, মাছ, কচ্ছপ, বিড়াল,উঁট, জিরাফ, সবার বাচ্চা স্কুলে পৌঁছে গেলো।
শুরু হলো ধুমধাম করে পড়াশোনা।।
“ফাষ্ট ইউনিট টেষ্ট” হলো।। হাতির বাচ্ছা ফেল।।
– “কোন সাবজেক্টে ফেল ??”হাতি এসে প্রশ্ন করে।।
– “গাছে ওঠা” সাবজেক্টে ফেল করেছে।।”
হাতি পড়লো মহা চিন্তায়।। তার ছেলে ফেল ?? এটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।।
শুরু হলো খোঁজাখুঁজি,, ভালো টিউটর পেতেই হবে।। সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।।
হাতির এখন একটাই টেনশন, যেভাবেই হোক,, ছেলেকে গাছে চড়া শেখাতে হবে !! “গাছে ওঠা’ সাবজেক্টে টপার করে তুলতে হবে।
ফাষ্ট সেশন অতিক্রান্ত। ফাইনাল রেজাল্ট আউট হলো। দেখা গেলো – হাতি, উঁট, জিরাফ, মাছ, সবার বাচ্চা ফেল। বাঁদরের বাচ্চা টপার হয়ে গেছে।
প্রকাশ্য মঞ্চে বিভিন্ন গেষ্টদের আমন্ত্রিত করে, বিরাট অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলো। সেখানে টপার হিসাবে বাঁদরের বাচ্চার গলায় মেডেল পরিয়ে দেওয়া হলো।
বাঁদর আনন্দে আত্মহারা। তার ছেলে টপার হয়েছে। এ গাছ থেকে সে গাছে, কি ভীষণ লাফালাফি করে চলেছে।
চুড়ান্ত অপমানিত হয়ে হাতি, উঁট,, জিরাফ, নিজ নিজ সন্তানকে দারুণ পিটুনি দিলো। এতো টিউশন, এতো খরচ, এর পরেও চূড়ান্ত অসম্মান! তারা মেনে নিতে পারলো না।
– “ফাঁকিবাজ,, এতো চেষ্টা করেও তোর দ্বারা গাছে চড়া সম্ভব হলো না ? নিকম্মা কোথাকার। শেখ, বাঁদরের বাচ্চার কাছে শিক্ষা নে, কিভাবে গাছে চড়তে হয়।”
ফেল কিন্তু মাছের ছেলেও হয়ে গেছে। সে আবার প্রত্যেক সাবজেক্টে ফেল, কেবলমাত্র “সাঁতার” কাটা ছাড়া।।
প্রিন্সিপাল বললো – “আপনার সন্তানের এ্যটেন্ডেন্স প্রবলেম।। পাঁচ মিনিটের বেশী ক্লাসে থাকতে পারে না।”
মাছ নিজের সন্তানের দিকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাকিয়ে রইলো।
বাচ্চা বলে -” মা-গো, দম নিতে পারি না, ভীষণ কষ্ট হয়। আমার জন্য জলের মধ্যে কোনো স্কুল দেখলে হতো না ?”
মাছ বলে – “চুপ কর বেয়াদব। এতো ভালো স্কুল আর কোথাও খুঁজে পাবি না। পড়াশোনায় মন দে, স্কুল নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।”
হাতি, উঁট, জিরাফ, নিজের নিজের ফেলিওর বাচ্চাকে পিটুনি দিতে দিতে বাড়ি ফিরে চলেছে। পথিমধ্যে বুড়ো খেঁকশিয়ালের সঙ্গে দেখা।
শিয়াল বলে – “আহা,, তোমরা মারো কেনো,, ছোট ছোট বাচ্চাদের ?”
উঁট বলে – “মেরেই ফেলবো একে। আমার মানসম্মান কিছু বজায় রাখলো না।”
শিয়াল বলে – “কি হয়েছে সেটা তো বলো ?”
হাতি বলে – “এত বড়ো শরীর নিয়ে, গাছে চড়তে পারলো না। বাঁদরের ছেলে টপার হলো, মান ইজ্জত কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না।”
শিয়াল অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
– “আচ্ছা, তোমরা গাছে চড়তে পারো? ”
জিরাফ বলে – “আমরা তো নিরক্ষর। তখন এসব স্কুল-টুল ছিলো না। থাকলে শিখে নিতাম, অবশ্যই গাছে চড়তে পারতাম।”
শিয়াল বলো – “তোমাদের গাছে চড়ার কি প্রয়োজন সেটাই বুঝতে পারলাম না। শোনো হাতি, তুমি নিজের বিশালাকার শুঁড় উঠিয়ে ধরো,, গাছের সবচেয়ে বড়ো ফলটি পেড়ে ভক্ষণ করো। তোমার গাছে ওঠা লাগবে না।”
– “উঁট ভাই, তোমার অনেক উঁচু ঘাড় রয়েছে। ঘাড় বাড়িয়ে দাও, গাছের সর্বশ্রেষ্ঠ ফল, পাতা পেড়ে খাও।”
– “বোন মাছ, তোমার সন্তানকে নদীর স্কুলে ভর্তি করে দাও। ওকে মনভরে সাঁতার কাটতে শেখাও। দেখবে,, একদিন তোমার ছেলে নদী অতিক্রম করে সমুদ্রে পাড়ি দেবে। সাত সমুদ্র পার করে,, তোমার নাম উজ্জ্বল করে দেবো। ওকে রাজার স্কুলে মোটেও পাঠিও না। ও মারা যাবে।”
মনে রাখতে হবে, শিক্ষা আপনার সন্তানের জন্য, শিক্ষার জন্য আপনার সন্তান না।আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই কিছু না কিছু স্পেশালিটি দিয়েই পাঠিয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব হলো, সেটা খুঁজে বের করা। তাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়া। তাহলেই দেখবেন, সে নিজেই নিজের গন্তব্য খুঁজে নেবে।
হাতির বাচ্চাকে জোর করে গাছে চড়াতে যাবেন না। মনে রাখবেন, মাছের বাচ্চা জল বিহীন স্কুলে গেলে, দম ফেটে মারা যাবে।
শিক্ষা-দীক্ষা, খেলা-ধুলা, নাচ-গান,
শিল্প-কলা, অভিনয়, ব্যাবসা, যে কোনো ক্ষেত্রেই হোক, সন্তানের প্রতিভার মূল্যায়ন করে নিন।। ওদের ইচ্ছেগুলো চিনে নিন, ওদের প্রতিভার মূল্য দিন।
আপনার দায়িত্ব শুধু একটাই, সন্তানকে সদাচারণ, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মানবতার শিক্ষা দিয়ে যাওয়া।
Leave a Reply