উদ্ধারের আহ্বান

সাগরে ভাসছে ২০০ রোহিঙ্গা, পানিশূন্যতা ও অনাহারে তিন ব্যক্তির মৃত্যু, ভয়াবহ পরিস্থিতি

অথর
কুষ্টিয়া প্রেস ডেক্স :  কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ
প্রকাশিত :২০ ডিসেম্বর ২০২২, ২:৫৫ অপরাহ্ণ
সাগরে ভাসছে ২০০ রোহিঙ্গা, পানিশূন্যতা ও অনাহারে তিন ব্যক্তির মৃত্যু, ভয়াবহ পরিস্থিতি ফাইল ছবি। রয়টার্সের

ভারতীয় জলসীমা মালাক্কা প্রণালী এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ২০০ রোহিঙ্গা বহনকারী একটি নৌকা ভাসছে। বেশ কয়েকদিন ধরে নৌকার আরোহীরা ক্ষুধার্ত। তাদের কাছে খাবার-পানি নেই।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট’র বরাত দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

খবরে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের জলসীমায় প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা একটি নৌকায় ভাসছেন। বেশ কয়েকদিন ধরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের কাছে কোনো খাবার বা পানি নেই। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকজন রাজনীতিক ভাসমান রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে আঞ্চলিক সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

খবরে আরও বলা হয়, ভাসমান নৌকাটির ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ খান রেজুয়ান নামে একজনকে ফোন করেছিলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারে একটি রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থান করছেন। নৌকার ক্যাপ্টেন রেজুয়ানকে বলেছেন, তারা মারা যাচ্ছেন।

রেজুয়ান দ্য কুইন্টকে জানিয়েছেন, ভাসমান নৌকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। ভাসমানদের কাছে খাবার বা পানি নেই। পানিশূন্যতা ও অনাহারে তিন ব্যক্তি মারা গেছেন।

ডিসেম্বরের শুরুতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা সমুদ্রে একটি ছোট নৌকায় (সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার উপযুক্ত নয়) ভাসতে থাকা রোহিঙ্গাদের কথা তুলে ধরে তাদের জরুরিভিত্তিতে উদ্ধারের আহ্বান জানায়। ওই সময় সংস্থাটির কাছে নৌকায় ২০০ রোহিঙ্গা থাকার তথ্য ছিল। তবে, দ্য কুইন্ট’র প্রতিবেদনে ১৬০ রোহিঙ্গার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের আইনপ্রণেতারা অ্যাসোসিয়েশন ফর সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশন্স (আসিয়ান) ও অঞ্চলটির অপর দেশগুলোর প্রতি ভাসমান রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের আহ্বান জানায়। মানবাধিকার বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে তাদের আহ্বান জানানো হয়।

আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর) বোর্ডের সদস্য ইভা সুন্দরী বলেছেন, চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নারী-শিশু ও কয়েকজন পুরুষকে একটি নৌকাকে ভেসে থাকতে দেওয়া চরম লজ্জাজনক। এই মানুষগুলোকে অবজ্ঞা মানবতার প্রতি অপমান ছাড়া কিছু না।

আল জাজিরা আরও জানায়, ধারণা করা হচ্ছে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাটি গত নভেম্বরের শেষে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ায় গত ১ ডিসেম্বর থেকে ভাসছে।

এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর ভিয়েতনামের একটি তেল পরিষেবা জাহাজের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের উপকূল থেকে ১৫৪ রোহিঙ্গা শরণার্থী বহনকারী একটি নৌকা উদ্ধার করা হয়। এসব শরণার্থীকে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

গত রোববার (১৮ ডিসেম্বর) শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী ২৩ শিশু, ৩৯ নারীসহ ১০৪ রোহিঙ্গাকে নিজেদের উপকূল থেকে উদ্ধার করে। ছোট একটি ট্রলারে করে এসব শরণার্থী মিয়ামরমার থেকে রওনা করে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। ইন্দোনেশিয়া পাড়ি দেওয়ার সময় ট্রলারটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা চলতি মাসের শুরুতে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভ্রমণ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শরণার্থী শিবিরের অবনতির কারণে কিছু অংশ মালয়েশিয়া যাত্রা করে। কিছু অংশ যায় বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে।

জাতিসংঘের মতে আনুমানিক ১৯২০ রোহিঙ্গা গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে সমুদ্রপথে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ছেড়েছে। যেখানে ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ২৮৭ জন। ভয়াবহ এ যাত্রায় ১১৯ জন হয়ত মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শেয়ার করে  সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published.