বিখ্যাত এক মুসলিম কবি জালাল উদ্দিন রুমি(র.)
১৩ শতকের বিখ্যাত এক মুসলিম কবি জালাল উদ্দিন রুমি(র.)। তার জীবনবোধের কাছে বার বার ফিরে যাই, যখনই মনে হয় জীবনের স্বাভাবিক চলার পথে আমরা কোথাও আটকে গেছি।জীবনের বিবিধ জটিলতার বেড়াজালে সুফিজম কিংবা একজন মরমি কবির অন্তর্নিহিত উপলব্ধিগুলো কখনো কখনো সামনে তাকাবার জন্যে ভীষণভাবে দরকার হয়।
জালাল উদ্দিন রুমি(র.)এঁর হৃদয় ছোঁয়া কয়েকটি উপলব্ধির কথা জানাবো এই লেখায়। প্রিয় শিক্ষক ও প্রিয় বন্ধু অতঃপর আধ্যাত্মিক পথের সহচারী গুরু শামস তাবরিজির সাথে তার ছিল গভীর সম্পর্ক। শামস তাবরিজি(র.)এঁর মৃত্যুর পর বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে তিনি লিখেছিলেন, “তুমি চলে গেলে আমার চোখ দিয়ে রক্ত বাহিত হলো। আমি কেঁদে কেঁদে রক্তের নদী বহালাম। দুঃখগুলো শাখা-প্রশাখা বেড়ে বড় হলো, দুঃখের জন্ম হলো। তুমি চলে গেলে, এখন আমি কীভাবে কাঁদবো? শুধু তুমি চলে গেছো তা-ই নয়, তোমার সাথে সাথে তো আমার চোখও চলে গেছে। চোখ ছাড়া এখন আমি কীভাবে কাঁদবো প্রিয়!”
বন্ধুত্ব কিংবা সম্পর্কের বিচ্ছেদ অনুভূতির করুণ এক উপলব্ধি যেন ছিল এই লাইনগুলো, প্রেমের সন্ধ্যান সম্পর্কে তিনি এমন করে বলেছিলেন, “যদি তুমি চাঁদের প্রত্যাশা কর, তবে রাত থেকে লুকিয়োনা। যদি তুমি একটি গোলাপ আশা কর, তবে তার কাঁটা থেকে পালিয়োনা, যদি তুমি প্রেমের প্রত্যাশা করো, তবে আপন সত্তা থেকে হারিওনা।”
ভালবাসাকে জালাল উদ্দিন রুমি(র.) সবচেয়ে বেশি মহিমান্বিত করেছেন। তিনি উপদেশ দিয়েছেন এভাবে, “যদি তুমি সত্যিকারের মানুষ হয়ে থাকো, তাহলে ভালবাসার পক্ষে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে বাজি ধরো। যদি না পারো, তাহলে এই কোলাহল ত্যাগ করো। কারণ, যার হৃদয় ভালবাসায় পূর্ণ না, সে কখনো গৌরবময় জীবনে পৌঁছাতে পারে না।”
আজকের দিনে ভালবাসার স্থায়িত্ব এতো কম যে ভালবাসার চেয়ে বিচ্ছেদের গল্পই শুনি বেশি আমরা। ভালবাসায় কি আসলেই বিচ্ছেদ থাকে? রুমি বিচ্ছেদ নিয়ে বলেছিলেন, “বিচ্ছেদ কেবল তাদের জন্যে যারা তাদের চোখ দিয়ে ভালবাসে। আর যারা ভালবাসে হৃদয় আর আত্মা দিয়ে, তাদের কাছে বিচ্ছেদ বলে কিছু নেই।”
কাউকে জাজমেন্ট করা, কি করা উচিত বলে জ্ঞান দেয়ার আগে নিজেকে সেই অবস্থানে দাঁড় করানো খুব কঠিন। রুমির এই সম্পর্কে উক্তি আছে এরকম- “মোমবাতির মতো আলো দেয়া সহজ নয়। কারণ, অন্যকে আলোকিত করতে হলে আগে নিজেকে আগুনে পোড়াতে হয়।”
Leave a Reply