ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল -
সিলেট জেলার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবারের বন্যা
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে নগরীসহ সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবারের বন্যা। স্থানীয়রা বলছেন, ১৯৮৮ সালের দুর্যোগ ছাড়িয়েছে এবারের বন্যা। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন লোকজন। বিশেষ করে সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাটসহ বেশ কিছু অঞ্চলের মানুষজনের বাড়িতে এখন গলা সমান পানি।
পরিস্থিতি এত ভয়াবহ যে, এখন ত্রাণের চেয়ে প্রাণ বাঁচানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল থেকে সিলেটের প্রত্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চায় জেলা প্রশাসন।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার সাদাত বলেন, বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেছে। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে- বানভাসি মানুষকে উদ্ধার করা। বন্যাকবলিত এলাকায় আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে জেলা প্রশাসন সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছিল। এরই মধ্যে তারা উদ্ধার কাজে নেমে পড়েছেন।
জানা গেছে, সিলেটে দ্বিতীয় দফা বন্যায় নগরীসহ ১৩টি উপজেলার সবক’টি এলাকা তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে মানুষ এখন দিশেহারা। অপরদিকে পানিতে ডুবে আছে কোম্পানীগঞ্জ, লামাকাজী, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ওসমানীনগরসহ সব ক’টি এলাকা। সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো সূত্র জানিয়েছে- সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইন নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতের বন্যার পানি গলাসমান হয়ে গেছে। শুক্রবার সকালে অনেক মানুষকে ঘরের চালায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় সেখানেও তারা থাকতে পারছেন না। নৌকার অভাবে আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছেন না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৬টায় সুরমা নদীর দুটি ও কুশিয়ারা নদীর একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সারি নদের একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্য নদ-নদীর পানিও ক্রমশ বাড়ছে।
স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বন্যাকবলিত মানুষেরা জানিয়েছেন, সিলেট নগরের অন্তত ২০টি এলাকার পাশাপাশি জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সদর, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ছয় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় বেড়েছে জোঁক, সাপ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব। চলাচলের জন্য মিলছে না নৌকা। ফলে জরুরি প্রয়োজনে কেউ ঘরের বাইরে বেরোতে পারছেন না।
Leave a Reply