যে জীবন সততার, সে জীবন অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাবেই : প্রধান বিচারপতি

অথর
কুষ্টিয়া প্রেস ডেক্স :  কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ
প্রকাশিত :১৮ জানুয়ারি ২০২২, ৫:৩৩ অপরাহ্ণ
যে জীবন সততার, সে জীবন অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাবেই : প্রধান বিচারপতি

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন যে জীবন সততার সাথে পরিচালিত হয়, সে জীবন অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবেই। বাধা-বিঘœ জীবনেরই অংশ। এসব পেরিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। সততা, নিষ্ঠা ও পরোপকার মনোভাবকেও জীবনের অংশ করতে হবে। জীবনে এগুলোর যথাযথ চর্চা থাকলে সে জীবন কখনো কারো অনিষ্ট করতে পারে না।
কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান আপীল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হওয়ায় কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের তিনি এ কথা বলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আসম আখতারুজ্জামান মাসুম সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন তিনি একদিন এই কুষ্টিয়া বার থেকেই জীবনের পেশাগত অধ্যায় শুরু করেন। সেদিন এই বারের অনেক প্রবীণ আইনজীবি তাকে সহযোগীতা করেছিলেন। তাদের অনেকেই আজ বেঁচে আছেন অনেকেই বেঁচে নেই। তিনি সবার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন জীবনে প্রতিটি স্তরেই আমাদের একে অপরের সহযোগীতা প্রয়োজন হয়। তিনি সবাইকে একে অপরের সহযোগী হবার অনুরোধ জানান। তিরি বলেন জীবনে বহু উত্থান-পতন আসবে, ধৈর্য ধরতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে নিমগ্ন সাধনার ভিতরে, সৎ ও পরোপকারী হতে হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, মানুষ মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে কিন্তু মনোবল হারালে চলবে না, রাজনীতির বশবর্তী হয়ে কারও প্রতিভার ও যোগ্যতার অসম্মান করা ঠিক নয়।
তিনি বলেন বিচার বিভাগকে সফল করতে হলে বার ও বিচারিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছন্দ থাকতে হবে। একে অপরের পরিপূরক হতে হবে। বার ও বিচারিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে দেহ ও ডানার মতো।

তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, আমি আমার শপথ অনুযায়ী কুষ্টিয়া সহ সারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সর্বদা সচেষ্ট করবো। মহান স্বাধীনতানতার আত্মত্যাগ কারী মুক্তি যোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের সকল ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা সকলে একযোগে কাজ করবো। বিচারক ও আইনজীবীদের তিনি পাখির দুটি ডানার সাথে তুলনা করে বলেন, একে অন্যকে সহযোগিতা করলে সততার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে।
প্রধান বিচারপতি এ সময় তার জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের নানা গল্প করেন। তিনি তার বিচারক জীবনে ঘটে যাওয়া দূর্বিসহ অধ্যায়ের উপরও বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন সেদিন যারা তাকে অপমানজনক ভাবে তার বিচারক জীবনে কালো অধ্যায় তৈরি করে দিয়েছিল। পরে বিচারক জীবনে পূর্ণবহাল হয়েও তিনি সেই তাদেরকেই উপকার করেছিলেন। তিনি কোন প্রতিশোধ নেননি। তিনি মহান সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেন যে তার মধ্যে কোন প্রতিশোধ মনোভাব তৈরি হয়নি।
উল্লেখ্য, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগের শেষের দিকে নিয়োগ প্রাপ্ত ৮ বিচারপতির একজন যারা ২০০১ এ বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারের রোষানলে পড়েন। পরবর্তীতে তাদেরকে বিচারবিভাগে স্থায়ী করা হয়নি। পরে এ নিয়ে মামলা হলে বিচারবিভাগ এই বিচারপতিদের পক্ষে রায় দিলে তারা পুনরায় ২০০৯ সালে বহাল হন।

সংবর্ধনা সভার সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কুষ্টিয়া সন্তান প্রথম প্রধান বিচারপতি, এটা আমাদের কুষ্টিয়া বাসির জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হলেও কুষ্টিয়া বাসির জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিতে অগ্রনী ভূমিকা রাখবেন তিনি প্রত্যাশা করেন।
সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাসুদ করিম মিঠুর পরিচালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিক, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি ড. আখতারুজ্জামান, সুপ্রীম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আকবর।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সাংসদ মাহাবুব উল আলম হানিফ, বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়ার মাননীয় জেলা জজ শেখ আবু তাহের।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি রবিউল ইসলাম প্রমুখ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শেয়ার করে  সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published.


আরও পড়ুন