সমগ্র জাহানের কাছে অতি বরকতময়
পবিত্র শব-ই-মেরাজের রজনী
পবিত্র শব-ই-মেরাজের রজনী সমগ্র জাহানের কাছে অতি বরকতময়। প্রিয় নবী (সা.)-কে স্বীয় রহস্যলোক দেখানোর জন্য আল্লাহ তা’আলা স্বীয় হাবিবকে মিরাজে নিয়ে যান। যে রাতে মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল, তাকে শব-ই মিরাজ বা মিরাজ রজনী বলা হয়।
মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল হিজরী (চন্দ্র) সন ২৬ রজব শনিবার দিবাগত রাতে। ঐ রাতে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)স্বরুপে আল্লাহ তা’য়ালার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছিলেন।
মেরাজ আরবী শব্দ, যার অর্থ পথ, সিঁড়ি, উর্ধ্বে আরোহণের অবলম্বন, আল্লাহর দীদার ইত্যাদি। প্রচলিত অর্থে হযরত রাসূল পাক সা. কর্তৃক আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের উদ্দেশ্য উর্ধ্বারোহনকে মেরাজ বলা হয়। সশরীর ও জাগ্রত অবস্থায়ই মিরাজ হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শপথ নক্ষত্রের, যখন তা বিলীন হয়। তোমাদের সাথি (মুহাম্মদ সা.) বিপথগামী হননি এবং বিভ্রান্ত হননি। আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। (বরং তিনি যা বলেন) তা প্রদত্ত ওহি (ভিন্ন অন্য কিছু নয়)। তাঁকে শিখিয়েছেন শক্তিধর (জিবরাইল আ.)। সে (জিবরাইল আ.) পাখাবিশিষ্ট। সে স্থিত হয়েছে দূর ঊর্ধ্বে। অতঃপর নিকটবর্তী হলো, পরে নির্দেশ করল। তারপর হলো দুই ধনুকের প্রান্তবর্তী বা আরও নিকট। পুনরায় তিনি ওহি করলেন তাঁর বান্দার প্রতি, যা তিনি ওহি করেছেন। ভুল করেনি অন্তর, যা দেখেছে। তোমরা কি সন্দেহ করছ তাঁকে, যা তিনি দেখেছেন, সে বিষয়ে। আর অবশ্যই দেখেছেন, তিনি তাঁকে দ্বিতীয় অবতরণস্থলে; সিদরাতুল মুনতাহার কাছে; তার নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া। যখন ঢেকে গেল সিদরা, যা ঢেকেছে, না দৃষ্টিভ্রম হয়েছে, আর না তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন; অবশ্যই তিনি দেখেছেন তাঁর রবের বড় নিদর্শনসমূহ।’ (সুরা-৫৩ নাজম, আয়াত: ১-১৮)।
মিরাজের একটা অংশ হলো ইসরা। ইসরা অর্থ রাতের সময়ের ভ্রমণ। যেহেতু নবী করিম (সা.)-এর মিরাজ রাতে হয়েছিল, তাই এটিকে ইসরা বলা হয়। বিশেষত বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়ে থাকে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি পবিত্র (আল্লাহ), যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিকালীন ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি, যাতে আমি তাঁকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।’(সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ১)।
আরবি পরিভাষায় মিরাজ হলো মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক সশরীর সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় হজরত জিবরাইল (আ.) ও হজরত মিকাইল (আ.) সমভিব্যাহারে বুরাক বাহনে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা হয়ে প্রথম আসমান থেকে একে একে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ; মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে দিদার লাভ ও জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করে ফিরে আসা। মিরাজ ভ্রমণে প্রিয় নবী (সা.) প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহিয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.), সপ্তম আসমানে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। প্রত্যেকের সঙ্গে সালাম কালাম ও কুশল বিনিময় হয়। তিনি বায়তুল মামুর গেছেন, যেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা আসেন ও প্রস্থান করেন; তাঁরা দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ পান না। অতঃপর সিদরাতুল মুনতাহার নিকটে যান। তারপর তিনি বায়তুল মামুরে পৌঁছান।
মুসলিম জাহানের কাছে শব-ই-মেরাজের রাত অতি পবিত্র এবং মহান আল্লাহর অফুরন্ত রহমত-বরকতে সমৃদ্ধ। এই রাতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, নফল রোজা রাখা ও নফল নামাজ আদায়ের পাশাপাশি জীব আত্মা অতঃপর সকল পাপকে ধ্বংস করে পরম আত্মা ও সকল পবিত্রতার মধ্যে থেকে পবিত্র শব-ই-মেরাজ পালন করি। মহান আল্লাহর আমাদের সহায় হোক।
শব-ই-মেরাজের নিগুর এই রহমত ও বরকতময় ধারণা আল্লাহর মনোনীত জ্ঞাণীদের কাছে যেমন আছে তেমনি সবার জানাটাও জরূরী। সবাইকে নিজের মন জগতের গভীরে চিন্তা করে এই পথের আলো তালাশ করে জমিনের মালিককে এই জমিনেই দেখার চেষ্টা করতে হবে, নতুবা সৃষ্টির শ্রেষ্ট মানব জনম অতৃপ্তি থেকে যাবে। অতঃপর শ্রেষ্ট এই মানব জীবনে মহান আল্লাহর সাথে দিদার না হলে, সে দুনিয়াতেও অন্ধ থাকিবে আবার পরকালেও অন্ধ থাকিবেন। হে প্রভু এর নিগুর রহস্য তোমার ওলি-আওলিয়াদের মাধ্যমে আমাদের সবাইকে জানার তৌফিক দান করুন।
Leave a Reply