ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার ছয় বছর পূর্ণ

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা হলি আর্টিজানে

অথর
কুষ্টিয়া প্রেস ডেক্স :  কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ
প্রকাশিত :১ জুলাই ২০২২, ২:১৪ পূর্বাহ্ণ
দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা হলি আর্টিজানে

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার ছয় বছর পূর্ণ হল আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নারকীয় ও বড় জঙ্গি হামলা হয়েছিল।

সেদিনের জঙ্গি হামলার খবর পেয়ে প্রথম অভিযান শুরু করে পুলিশ। অভিযানের শুরুতেই পুলিশের দুই কর্মকর্তা মারা যান। আর আহত হন ২৫ জন। আহত অবস্থায় তাদেরকে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই রাতে কয়েকবার প্রস্তুতি নিয়েও বিশেষ অভিযান চালায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যদের পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ অবসান হয় জিম্মিদশার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয় হামলাকারী ৫ জঙ্গির।

২০১৬ সালের ২ জুলাই সকাল আনুমানিক ৭টা ৪০ মিনিট। জিম্মিদের উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই সব সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা। পরে নিহত ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানের, একজন ভারতের ও ৩ জন বাংলাদেশি।

এই হামলার দুই বছরের মাথায় পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আর ২০১৯ সালের নভেম্বরে নিম্নআদালত রায় ঘোষণা করে। নিম্নআদালতে রায়ের পর প্রায় আড়াই বছর পার হয়ে গেছে। নৃশংস এই হামলার মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানি এখনও শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, তারা ঈদের পরই শুনানির উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি জানান, শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত আছে, রাষ্ট্রপক্ষও শুনানির বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শেষ হলে প্রধান বিচারপতির কাছে এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হবে।

এদিকে ৬ বছর আগের সেই হামলা এবং নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের বর্বরতা এখনও ভুলেননি কেউ। সেদিন হলি আর্টিজানে জঙ্গিদের হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও ১৭ জন বিদেশি নাগরিকসহ নিহত হন ২২ জন। ঘটনাটি গোটা দেশ তথা সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়।

সেদিনের ওই জঙ্গি হামলার সময় গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন আ. আহাদ। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।

আ.আহাদ বলেন, যারা এ ঘটনার দিনে ঘটনাস্থলে ছিলেন তারাই ভালো বলতে পারবেন যে ওই রাতটা কতটা ভয়াল ছিলো। তিনি বলেন, গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ফাস্ট রেসপন্সন্ডারদের একজন মানুষ আমি। দুই পায়ে স্পিলিন্টার বিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার আগ পর্যন্ত জঙ্গিদের প্রতিরোধ করে গেছি। এটি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নারকীয় ও বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা। নারকীয় ওই জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ৩৬-৩৭ জন পুলিশ সদস্য।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আ. আহাদ বলেন, ঘটনার দিন ইফতার শেষ করে অফিসে বসে চা খাচ্ছিলাম। চা শেষ হওয়ার আগেই আনুমানিক রাত প্রায় ৯ টার দিকে ওয়ারলেস সেটে শুনতে পাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে গোলাগুলি হচ্ছে। খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে যেতে সময় লেগেছিল ৫-৬ মিনিট। তখন হামলার বিষয়টি ফোনে তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ও ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে জানানো হয়। পরে পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট আসে।

ডিসি আহাদ বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগে একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে মোবাইল টিমটি হলি আর্টিজানের সামনে যাওয়া মাত্রই তাদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে থাকে। সন্ত্রাসীদের গুলির জবাবে মোবাইল টিমের সদস্যরাও গুলি ছোড়ে। এরই মধ্যে ওই মোবাইল টিমের দলনেতা হলি আর্টিজানের প্রধান ফটকটি বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন, যাতে সন্ত্রাসীরা বের হয়ে যেতে না পারে। গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে ওই এসআই গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমরা শুনতে পায় প্রচুর গোলাগুলির শব্দ এবং বিভিন্ন আওয়াজ আসছিল হলি আর্টিজানের ভেতর থেকে। গোলাগুলির শব্দ শুনে আমাদের মনে নানা ধরনের সন্দেহ জাগছিল। তখনও আমরা নিশ্চিত ছিলাম না যে এটি জঙ্গি হামলা কি না। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আমাদের একাধিকবার গুলি বিনিময় হয়। তারা বাইরে বের হতে চেয়েছিল, কিন্তু আমাদের প্রতিরোধের কারণে তারা বের হতে পারেনি।

তিনি বলেন, প্রাথমিক ধারণা ছিল হয়তো ছিঁচকে সন্ত্রাসীদের ঘটনা। পরে খবর আসে ভেতরে কিলিং মিশন চলছে। তারা যাকে পেয়েছে তাকে হত্যা করেছে। ভিতরে যে পরিমাণ গুলির শব্দ ও চিৎকারের শব্দ পাচ্ছিলাম তাতে মনে সন্দেহ তৈরি হয় যে এটি হয়তো বড় কোনো সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গি হামলা। তখন আমরা আরও পুলিশ সদস্য পাঠানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাই। হলি আর্টিজানে হামলা শুরুর ৪০-৫০ মিনিটের মধ্যে তৎকালীন র‍্যাব ডিজি ও বর্তমান আইজিপি স্যার এবং তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার স্যার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‍্যাবের বড় একটি ডিপ্লয়মেন্ট হয়ে যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শেয়ার করে  সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published.