কুষ্টিয়ায় শহরের অনেক সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা, চরম জনদুর্ভোগ
বৃষ্টিতে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে রয়েছেন পৌরবাসী; বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।মঙ্গলবার ভোররাত থেকে শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। একটানা প্রায় সাত থেকে আট ঘন্টার বৃষ্টিতে নাজেহাল পরিস্থিতি তৈরী হয় কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন সড়কে। শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে বৃষ্টিতে হাটুজল। পথচারীদের দাবি শহরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো হলে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
জেলার গুরুত্বপুর্ণ স্থান কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও দায়রা জজ আদালত দপ্তরে প্রবেশের প্রধান পাদদেশে চিলো হাটুজল। সরেজমিনে দেখা যায়- বৃষ্টির পানিতে হাটুজল ছিলো কুষ্টিয়া মেডিকেল এসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল প্রাঙ্গনে।
এলাকাবাসী জানান, শহরের বিভিন্ন জায়গায় পৌর কর্তৃপক্ষ নালা নির্মাণ করেছে ঠিকই, কিন্তু তা কোনো কাজে আসছে না। নালাগুলো অগভীর ও মাটিতে ভরে গেছে। এ কারণে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নালার ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে সড়কে উঠে আসে। এ ছাড়া মুষলধারে বৃষ্টি হলে নালার নোংরা পানি সড়কের পাশে বিভিন্ন বাড়িতেও ঢুকে যায়। তখন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ হয়।
এছাড়াও বৃষ্টিতে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোড, সরকারী কলেজ, মডেল থানা,ব্যাবগলীর রাস্তা , আর এ চৌধুরী খান রোড়, পেয়ারাতলা, জেলখানা, হাসপাতাল রোড, পূর্ব মজমপুর, পশ্চিম মজমপুর, কাটাইখান মোড় ও ছয় রাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা প্রায় এক ফুট আবার কোথাও কোথাও দেড়-দুই ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায়।
কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের সমাগম অনেকটাই কম। প্রবল বৃষ্টিতে ছাতাও যেন অসহায়। এমন চিত্রই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ফুটে উঠেছে। কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজার ও বকচত্বর সহ বিভিন্ন বাজারে ছাতা মাথায় ঘোরাঘুরি করছেন কয়েকজন ক্রেতা। এদিকে বাজারের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা পড়েন বিপাকে। হোসেন আলী নামের এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি যে জায়গায় সবজি বিক্রি করি, সেখানে পানি জমে গেছে। ফলে বেশির ভাগ সবজি এখনো বিক্রি করতে পারিনি।’
গতকাল বেলা দেড়টার সময় কুষ্টিয়া গালর্স স্কুলের সামনের রাস্তায় দেখা যায়, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় পানি জমে থাকায় তারা পার হতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা জানায়, রাস্তায় পানি থাকায় জুতা পরে রাস্তা পার হতে পারছে না। ড্রেনগুলো যদি পরিষ্কার থাকত, তাহলে দ্রুত পানি অপসারণ হয়ে যেত। এতে দুর্ভোগে পড়তে হতো না তাদের।
কুষ্টিয়া শহরের সড়ক ছাড়াও জেনারেল হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, আদালত প্রাঙ্গণ, বিভিন্ন অফিস, পৌর বাজার, দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে।
বেলা ৩টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ এলাকাসহ বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নামেনি। এ পরিস্থিতির জন্য কুষ্টিয়া পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন নাগরিকরা।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারে আড়তের ব্যবসায়ী বলেন, ‘আড়তে পানি ঢুকে পেঁয়াজের বস্তা ডুবে গেছে। ইট দিয়ে উঁচু করেও মাল রক্ষা করা যাচ্ছে না। বেচাকেনাও করতে পারছি না। ড্রেন পরিষ্কার না থাকায় পানি নামতে পারছে না।’
শুকনা-কাঁচা মরিচ, আলুসহ সব মালামাল পানিতে ডুবেছে। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সিলেট, সুনামগঞ্জের মতো হবে মনে হচ্ছে। পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা নেই।’
পৌরবাসিগণ বলেন, ‘শহরের সব সড়ক ডুবে গেছে। দেখার কেউ নেই। স্কুলের বাচ্চাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার কোনো উদ্যোগ নেই।’
কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘হঠাৎ ভারি বর্ষণে পানি বেড়েছে। কিছুটা সময় গেলে পানি নেমে যাবে।’
Leave a Reply